1. প্রোটিন কী?
কার্বন হাইড্রোজেন অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সহযোগে গঠিত অনেকগুলি অ্যামাইনো অ্যাসিডের দীর্ঘ শৃংখল পরস্পর পেপটাইড বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়ে জটিল জৈব যৌগ গঠন করে তাকে প্রোটিন বলে।
অ্যামাইনো এসিড হল প্রোটিনের গঠনগত একক
2. অ্যামাইনো অ্যাসিড
কমপক্ষে একটি অ্যামাইনো এবং একটি কারবক্সিল মূলক নিয়ে গঠিত যে জৈব অ্যাসিড প্রোটিন অনুর গঠন গত একক হিসেবে কাজ করে তাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড বলে
3. পেপটাইড বন্ড
এমিল ফিশারের মতে দুটি অ্যামিনাে অ্যাসিড পরস্পরের সঙ্গে একটি সমযােজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। এই বন্ধনকে পেপটাইড বন্ধন বলে। পেপটাইড বন্ধনে একটি অ্যামিনাে অ্যাসিডের অ্যামিনাে (– NH,) মূলক, অপর একটি অ্যামিনাে অ্যাসিডের কার্বক্সিল (– COOH) মূলকের সঙ্গে(C=N) যুক্ত থাকে।
4. অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড
যেসব অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহে সংশ্লেষিত হয় না বাইরে থেকে খাদ্যের মাধ্যমে গৃহীত হয় এবং যেগুলি দেহের পক্ষে অপরিহার্য তাদের অপরিহার্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড বলে। উদাহরণ- লিউসিন
5. অনপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড
যেসব অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহে সংশ্লেষিত হয় এবং খাদ্যের মধ্যে যাদের উপস্থিতি অপরিহার্য নয় তাদের অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড বলে । যেমন - সিস্টিন
6. বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড
7. অ্যামিনো অ্যাসিডের কার্য (Functions of Amino Acid)
1. দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি
অ্যামিনাে অ্যাসিড জীবদেহের প্রােটোপ্লাজম গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রােটোপ্লাজম কোশ গঠনে অংশ নেয়। ফলে অ্যামিনাে অ্যাসিড কোশ সৃষ্টির মাধ্যমে দেহের ক্ষয়পূরণ করে এবং বৃদ্ধি ঘটায়।
2 প্রােটিন গঠন
বিভিন্ন অ্যামিনাে অ্যাসিড, গঠনধর্মী প্রােটিন যেমন—কেরাটিন প্রভৃতি গঠনে অংশ নেয়।
3. দেহের রসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ
অ্যামিনাে অ্যাসিড উৎসেচক গঠনে অংশগ্রহণ করে। আবার উৎসেচক আমাদের দেহের নানা প্রকার শারীরবৃত্তীয় এবং জৈবিক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। ফলে আমরা সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম থাকি। এইদিক থেকে বিবেচনা করলে পরােক্ষভাবে অ্যামিনাে অ্যাসিড আমাদের দেহের বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
4. গ্যাসীয় পদার্থের পরিবহণ
আমাদের রক্তে অবস্থিত বাহক প্রােটিন, হিমােগ্লোবিন গঠনে অংশ নেয়। হিমােগ্লোবিন অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহণে অংশ নেয়। সেই অর্থে অ্যামিনাে অ্যাসিড পরােক্ষভাবে গ্যাসীয় পরিবহণে অংশ নেয়।
প্রোটিনের শ্রেণীবিভাগ
উৎস বা উৎপত্তি অনুযায়ী প্রােটিনের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Protein according to Source or Origin)
প্রাণীজ প্রােটিন
যেসব প্রােটিন প্রাণীদেহ থেকে পাওয়া যায়,তাদের প্রাণীজ প্রােটিন বলে।
উদাহরণ—মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা,পনির ইত্যাদি হল প্রাণীজ প্রােটিন।
উদ্ভিজ প্রোটিন
যেসব প্রােটিন উদ্ভিদদেহ থেকে পাওয়া যায়, তাদের উদ্ভিজ্জ প্রােটিন বলে। উদাহরণ—ডাল, বাদাম, সয়াবিন প্রভৃতির প্রােটিন হল উদ্ভিজ্জ প্রােটিন।
রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী প্রোটিনের শ্রেণিবিভাগ (Classification Protein according to Chemical Structure)
রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী প্রােটিনকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা— সরল প্রােটিন ,সংযুক্ত প্রােটিন (conjugated protein) এবং লব্দ প্রােটিন (derived protein)।
1 সরল প্রােটিন
সংজ্ঞা: যেসব প্রোটিন কেবলমাত্র অ্যামিনাে আসিড দিয়ে গঠিত হয়, তাদের সরল প্রােটিন বলে।
যেমন - অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন
সংযুক্ত প্রোটিন
সংজ্ঞা: যেসব সরল প্রােটিনের সঙ্গে অ-প্রােটিন অংশ যুক্ত থাকে, তাকে সংযুক্ত প্রােটিন বা যুগ্ম প্রােটিন বলে। এই জাতীয় প্রােটিনের আরদবিশ্লেষণ করলে নানাপ্রকার অ্যামিনাে অ্যাসিড ছাড়াও একটি জৈব বা অজৈব অপ্রােটিন বস্তু পাওয়া যায়। এই অতিরিক্ত অ-প্রােটিন অংশকে প্রস্থেটিক গ্রুপ বলে।
যেমন - ক্রোমোপ্রোটিন(হিমোগ্লোবিন)
লব্ধ প্রোটিন
সরল অথবা যুগ্ম প্রোটিন এর আদ্রবিশ্লেষণ এর ফলে উৎপন্ন প্রোটিনজাতীয় যৌগ গুলিকে লব্ধ প্রোটিন বলে
যেমন- ফাইব্রিন
অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিডের উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রোটিনের শ্রেণীবিভাগ
প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন
যেসব প্রোটিনে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড গুলির সবকটি সুষম অবস্থায় অর্থাৎ দেহ নির্মাণে উপযোগী অনুপাতে উপস্থিত থাকে তাদের প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন বলে।
যেমন - দুধ, ডিম
দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন
যে সকল প্রোটিনে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড গুলি এক বা একাধিক অনুপস্থিত থাকে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন বলে সাধারণত উদ্ভিজ্জ প্রোটিন দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত যেমন ডাল বাটা চাল প্রভৃতি প্রোটিন
জীবদেহে প্রোটিনের গুরুত্ব
(1) তাপশক্তি উৎপাদন
1 গ্ৰাম প্রোটিন জাতীয় খাবার জারণের মাধ্যমে 4.1 kcal তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। মানবদেহে মোট শক্তি চাহিদার প্রায় 10 – 15 ভাগ প্রােটিন জাতী) খাদ্য সরবরাহ করে।
(2) দেহের বৃদ্ধি, গঠন ও সুরক্ষা প্রদান :
প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি,গঠন ও ক্ষয়পুরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কোশীয় উপাদানের অধিকাংশ এবং দেহের অস্থি, তরুণাথি, পেশি গঠনে প্রােটিন সাহায্য
(3) উৎসেচক সংশ্লেষ
মানুষের দেহে বিভিন্ন উৎসেচক(যেমন— অক্সিডেজ, হাইড্রোলেজ প্রভৃতি) সংশ্লেষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(4) হরমােন উৎপাদন : মানবদেহে গুরুত্বপূর্ণ হরমােন (যেমন-ACTH, STH, ইনসুলিন প্রভৃতি) সংশ্লেষে প্রােটিন অংশগ্রহণ করে।
(5) রক্ততঞন : প্রােথ্রম্বিন, ফাইব্রিনােজেন প্রভৃতি প্লাজমা প্রােটিন ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে।
(6) রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা সৃষ্টি : দেহে রােগ প্রতিরােধের জন্য গামা-গ্লোবিউলিন বা অ্যান্টিবডি উৎপাদনে প্রােটিন মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
(7) হিমােগ্লোবিন গঠন : রক্তে অবস্থিত লাল বর্ণের শ্বাসরঞ্জক হিমােগ্লোবিন গঠনে গ্লোবিন নামক প্রােটিন সাহায্য করে।





0 Comments